ভয়াল ২৯ এপ্রিলের শোকস্মৃতি
30/04/2012 10:36ভয়াল ২৯ এপ্রিলের শোকস্মৃতি
‘এগইশ বছর ধরি ঘুমাইত ন’পারির’
সৌজন্যেঃ দৈনিক প্রথম আলো, নিজস্ব প্রতিবেদক, কক্সবাজার। ৩০/০৪/২০১২ সংখ্যা
‘মুহূর্তত চোখর সামনে জলোচ্ছ্বাস ভাসাই নিল আঁরার দুই মাইয়া, এক পোয়ারে। গাছ ধরি হেদিন আঁরা দুইজন (স্বামী-স্ত্রী) হন মতে পরানে রক্ষা পাইলেও আদরের তিন সন্তান হারাই ফেল্লি। এই যন্ত্রণায় গত এগইশ (একুশ) বছর ধরি আঁরা ঘুমাইত ন’পারির। মাথা গুঁজাইবার একখান ঠাইও হন মিক্যা (কোথাও) গরিত ন’পারি। হেই ঘূর্ণিঝড়ত আঁরাও মরি গেলে বহুত ভালা অইত।’
কথাগুলো দুদু মিয়ার (৫৬)। ১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিল ঘূর্ণিঝড় আর জলোচ্ছ্বাসে তিন সন্তানকে হারিয়েছেন তিনি। সন্তান হারানোর সেই যন্ত্রণা আজও তাড়া করে বেড়ায় কক্সবাজার পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের নাজিরারটেক এলাকার এই দিনমজুরকে। গতকাল রোববার সকালে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
এ সময় দুদু মিয়ার স্ত্রী মোতাহেরা বেগম (৪৫) জানান, তাঁদের বাড়ি কুতুবদিয়া উপজেলার আলী আকবরডেইল ইউনিয়নের খুদিয়ারটেক গ্রামে। ভয়াল ঘূর্ণিঝড়ে আত্মীয়স্বজন ও বসতবাড়ি হারিয়ে তাঁরা কক্সবাজার শহরের নাজিরারটেক চরে আশ্রয় নিয়েছেন। চরের একটি অস্থায়ী ঘরে ২১টি বছর কেটে গেলেও এখন পর্যন্ত তাঁদের স্থায়ী কোনো সমাধান হয়নি।
ঘূর্ণিঝড়ে পাঁচ ছেলে ও এক মেয়ে হারানো কুতুবদিয়ার লেমশিখালী গ্রামের মৃত নুরুল আবছারের স্ত্রী আমেনা খাতুন (৫০) বলেন, ২১ বছর ধরে দুই ছেলেকে নিয়ে তিনি কক্সবাজার বিমানবন্দরের পশ্চিমে সমুদ্র চরের ফদনারডেইল গ্রামে বসবাস করছেন।
শহরের সমুদ্র উপকূলের ফদনারডেইল, নাজিরারটেক, সমিতিপাড়া, বন্দরপাড়াসহ পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডে ৪০ হাজারের বেশি ভাসমান মানুষ বসবাস করছে। এদের মধ্যে অন্তত ২০ হাজার লোক ২৯ এপ্রিলের ভয়াবহ জলোচ্ছ্বাসে স্বজন হারানো। তারা এসেছে কুতুবদিয়া, মহেশখালী, চকরিয়া, পেকুয়াসহ বিভিন্ন স্থান থেকে। সরেজমিনে দেখা গেছে, ২১ বছর আগের ঘূর্ণিঝড়ে প্রাণ হারানো স্বজনদের জন্য প্রায় প্রতিটা ঘরে চলছে দোয়া মাহফিল।
কক্সবাজার পৌরসভার কাউন্সিলর আকতার কামাল জানান, কুতুবদিয়া থেকে উদ্বাস্তু হয়ে তিনিও এই এলাকায় আশ্রয় নিয়েছেন। বর্তমানে এই উপকূলে ৪০ হাজার ভাসমান মানুষের বসবাস। কিন্তু কোনো সরকারই এই উদ্বাস্তুদের স্থায়ী বসবাসের ব্যবস্থা করেনি।
Tags:
———
Back