আজ ২৯ এপ্রিল ইতিহাসের ভয়াল প্রলয়ংকরী দিন

29/04/2012 13:14

 

আজাদী ডেস্ক ॥
আজ ২৯ এপ্রিল ইতিহাসের ভয়াল প্রলয়ংকরী দিন। আজ থেকে ২১বছর আগে ১৯৯১ সালের এ দিনে বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে আঘাত হেনেছিল স্মরণকালের ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস। রাতের অন্ধকারে মুহূর্তের মধ্যে লণ্ডভণ্ড হয়ে গিয়েছিল উপকূলীয় এলাকা। দেশের অন্যান্য এলাকার মত পাহাড়-সাগরবেষ্টিত চট্টগ্রামের উপকূলীয় এলাকা সেদিন ঘূর্ণিঝড়ের ছোবলে বিরাণভূমিতে পরিণত হয়েছিল। ঘূর্ণিঝড় জলোচ্ছ্বাসে লণ্ডভণ্ড হয়ে যায় কক্সবাজার, মহেশখালী, চট্টগ্রামের আনোয়ারা, বাঁশখালী, পতেঙ্গা, সীতাকুণ্ড, চকরিয়াসহ বিস্তীর্ণ উপকূলীয় এলাকা। সর্বোচ্চ ২২০ কিলোমিটার গতিবেগে বয়ে চলা ঝড়, জলোচ্ছ্বাসে বিরাণ ভূমিতে পরিণত হয় দেশের ১৫ জেলার ২৫৭ টি ইউনিয়ন। মারা যায় ১ লাখ ৬০ হাজার মানুষ। ঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে ক্ষতিগ্রচ্চ হয় ৫ হাজার কোটি টাকার সম্পদ। ১৯৯১ সালের ঝড়-জলোচ্ছ্বাসে লণ্ডভণ্ড হয়ে যাওয়া উপকূল দীর্ঘ ২১ বছর পরেও অরক্ষিত রয়ে গেছে। এখনও বাতাস বইলে চট্টগ্রামের উপকূলীয় জনগণ আতঙ্কিত হয়ে ওঠে। ১৯৯১ সালে ঘটে যাওয়া সেই প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড়ের কথা উপকূলবাসী তথা দেশের মানুষের কাছে অম্লান হয়ে রয়েছে। ২৯ এপ্রিল এই ভয়ংকর রাতে হাজার হাজার মানুষ হারিয়েছে পরিবার পরিজন। আপনজনদের সাথে ভেসে গেছে মাথা গোঁজার ঠাঁই। এ ঘূর্ণিঝড়ে দেশের সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে চট্টগ্রাম জেলার উপকূলীয় এলাকা বাঁশখালীতে। শুধু বাঁশখালীতেই সেদিন ৪৫ হাজার মানুষ নিহত এবং কয়েকশ’ কোটি টাকার সম্পদ বিলীন হয়েছে। সাগর পাড় থেকে ৬ কিলোমিটারের মধ্যে এমন কোন ঘরবাড়ি বাদ ছিল না যা ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। পরবর্তীতে কক্সবাজারের টেকনাফ থেকে চট্টগ্রামের মিরসরাই পর্যন্ত ২ শত কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ৩০০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করলেও পরিকল্পনা অনুযায়ী তা নির্মাণ হয়নি। বেড়িবাঁধ নির্মাণের পর রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে বিভিন্ন জায়গায় নতুন করে ভাঙন দেখা দেয়। আমাদের চকরিয়া প্রতিনিধি জানান, ২৯ এপ্রিলের সেই প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড় ও ভয়াবহ জলোচ্ছ্বাসে কক্সবাজারের চকরিয়া ও পেকুয়া উপজেলার ২৫ হাজার নারী-পুরুষ প্রাণ হারায়। পাশাপাশি হাজার হাজার গবাদি পশু প্রাণ হারায়। সম্পদের ক্ষতি হয় প্রায় হাজার কোটি টাকার। চকরিয়া ও পেকুয়ায় ঘূর্ণিঝড় পরবর্তী দেশি-বিদেশি অর্থায়নে শতাধিক সাইক্লোন শেল্টার নির্মিত হলেও এগুলো দেখভাল করার দায়িত্ব এখনো কারো উপর বর্তায়নি। শেল্টারগুলো যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে দিন দিন শ্রীহীন হয়ে পড়ছে। পাশাপাশি এসব শেল্টারের বৈদ্যুতিক সরঞ্জামসহ নানা উপকরণ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। দুবৃর্ত্তরা খুলে নিয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন দামী মালামাল। চকরিয়া ও পেকুয়ার উপকূলীয় এলাকার জনগণকে জলোচ্ছ্বাসের তাণ্ডব থেকে রক্ষার জন্য টেকসই কোন বেড়িবাঁধ নির্মিত হয়নি বললেই চলে। ফলে বেশিরভাগ উপকূলীয় ইউনিয়ন এখনো অরক্ষিত রয়েছে। এমনকি প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে উপকূলীয় জনগোষ্ঠীর জানমাল রক্ষার জন্য দুই উপজেলার উপকূলীয় এলাকায় ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট (প্যারাবন) সৃষ্টি করা হলেও বিগত সময়ে প্রভাবশালীরা তা উজাড় করে সেখানে চিংড়ি চাষ করছে। ফলে যেকোন সময় বিগত ১৯৯১ সালের মতো প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ হলে প্রাণহানি আগের চেয়ে বেড়ে যাবে বলে অভিজ্ঞমহলের অভিমত। এ ব্যাপারে চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) খন্দকার জাকির হোসেন জানান, রেড ক্রিসেন্ট ও উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন দপ্তরের ত্রাণ শাখার অধীনে যেসব সাইক্লোন শেল্টার রয়েছে সেগুলো ভালই আছে। সাইক্লোন শেল্টারগুলো দেখভালের দায়িত্ব এককভাবে উপজেলা প্রশাসনের না থাকায় অধিকাংশ শেল্টারের অবস্থা শোচনীয় বলে ইউএনও স্বীকার করেন। বাঁশখালী প্রতিনিধি জানান, ১৯৯১ এর প্রলয়ংনকারী ঘূর্ণিঝড়ে বাঁশখালীর উপকূলীয় বেড়িবাঁধ তছনছ হয়ে যাওয়ার পর থেকে বিগত ২১ বছরেও এ এলাকায় স্থায়ী বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা হয়নি। ফলে পূর্ণিমা অমাবশ্যায় জোয়ারের পানিতে সয়লাব হয় উপকূলীয় এলাকার বাড়ি-ঘর। স্থায়ীভাবে উপকূলীয় বেড়িবাঁধ নির্মাণ না হওয়ায় বাঁশখালী উত্তরে শংখনদীর ভাঙনের কবলে পড়ে নিঃস্ব হচ্ছে পুকুরিয়া সাধনপুর ইউনিয়নের অনেক পরিবার।

 

উৎসঃ দৈনিক আজাদী, ২৯শে এপ্রিল,২০১২

 

Back
Site Fights Spirit Counter

The Site Is Designed & Sponsored By Kamrul Islam Mishu Kutubi